রসে টইটম্বুর, জিভে আসে জল…
সাখাওয়াত হোসেন হৃদয় পাকুন্দিয়া, ১৯ মে ২০১৫, মঙ্গলবার:
রসে টুইটম্বুর। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। খেতে সুস্বাদু। আকারে বড়। বাতাসের তালে, গাছের পাতার ফাঁকে লাল হয়ে দোলছে আর দোলছে। দেখে যেন জিভে জল এসে যায়। মন চায় হাত দিয়ে ধরে মুখে নিয়ে খেতে। বল ছিলাম কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের বিখ্যাত লিচুর কথা। যে লিচুর স্বাদ নেওয়ার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন ওই গ্রামটিতে। এমনকি দেশের বাইরেও পাঠানো হচ্ছে এই লিচু।
বাজারে এখনও মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু ওঠেনি। কেবল পাকতে শুরু করেছে। ৫/৬দিন পর পুরো পেকে যাবে। কিন’ ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন মঙ্গলবাড়িয়ায় আসছেন লিচু কেনার জন্য। অনেকেই গাছ কিনছেন আবার অনেকেই লিচুর জন্য অগ্রীম বায়না করে যাচ্ছেন। যাও কিছু বিক্রি হচ্ছে তাও চড়া দামে। প্রতি একশ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৪শ থেকে ৫শ টাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে এ গ্রামের জনৈক দারোগা সদূর চীন থেকে এই জাতের লিচু সর্বপ্রথম রোপণ করেন। এরপর থেকে এ লিচুর স্বাদ, গন্ধ, সুস্বাদু দেখে পুরো মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে লিচু চাষ। এ গ্রামের অনেকেই লিচু চাষে এখন স্বাবলম্বী। গ্রামের প্রায় শতাধিক লিচু চাষির সহস্রাধিক লিচু গাছ রয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতেই কমবেশি লিচু গাছ রয়েছে। মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচুর সঠিক জাত জানা সম্ভব হয়নি। তবে গ্রামের নামানুসারে একে ‘মঙ্গলবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহি’ লিচু বলে দেশে খ্যাতি অর্জন করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে লিচু চাষি ও স’ানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। গত ২-৩দিন বছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে লিচুর ফলন কম হলেও এবার তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। এ গ্রামে প্রতিবছর প্রায় অর্ধকোটি টাকার মতো লিচু বিক্রি হয়ে থাকে বলেও জানা গেছে। মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচু চাষি মজিবুর রহমান (৭৫) বলেন, তার শতাধিক গাছে লিচু ধরেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লিচুর ফলন ভাল হয়েছে। এবছর তিনি লিচু বিক্রি করে লাভবান হবে বলে জানান।
একই গ্রামের লিচু চাষি তৌহিদ মিয়া (৫০) জানান, বাপ-দাদার সময় থেকে তিনি লিচু চ চাষের সাথে জড়িত। লিচু চাষ করে তিনি পরিবারের ভরণ-পোষণসহ আর্থিকভাবেও লাভবান। এ বছর তার ১শ ২৮টি গাছে লিচু চাষ করেছেন। এতে তার ১লক্ষ ৮০হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পুরো লিচু বিক্রি করলে ৮/৯লক্ষ টাকা বিক্রি হবে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান। মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ লিয়াকত হোসেন খান বলেন, এ লিচু দেশের সম্পদ। লিচুর জাত নির্ণয় প্রক্রিয়াধীন। উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র গত দুই বছর ধরে এ লিচু চাষের ডাটা সংগ্রহ করছেন ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। শীঘ্রই এ লিচুর জাত সম্বন্ধে স্পষ্ট হওয়া যাবে।